সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলাফল | Impact of Santhal Rebellion
সাঁওতাল বিদ্রোহের গুরুত্ব
1055-56 খ্রিস্টাব্দে দামিন-ই-কোহ অঞ্চলে সাঁওতালরা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল, তা সাঁওতাল বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহ বীরভূম, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, মানভূম, রাজমহল ও সাহেবগঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল।সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলাফল:
আপাতদৃষ্টিতে এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল বা গুরুত্বকে কখনো ছোট করে দেখা যায় না। এই বিদ্রোহের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হল –সাঁওতাল বিদ্রোহ দমিত হলেও ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে সাঁওতালদের জন্য একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ড গঠন করা প্রয়োজন। ফলে সরকার একপ্রকার বাধ্য হয়েই সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে 'সাঁওতাল পরগনা' নামে জেলা গঠন করে।
সরকার সাঁওতালদের একটি পৃথক উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং সাঁওতাল পরগনায় সরকারি কোনো আইন কার্যকরী হবে না বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সাঁওতাল গোষ্ঠীপতিদের বিশেষ অধিকার স্বীকার করা হয়।
ব্রিটিশ সরকার মহাজনদের সুদের হার লিস্ট করে দেই এবং সাঁওতালদের এলাকায় মহাজন ও জমিদারদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে জমিদার ও মহাজনদের শোষন হ্রস পায়।
সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলে সাঁওতালদের জমির ওপর কর হ্রস করা হয়। সাঁওতাল পরগনাকে যতদূর সম্ভব ভারতীয় জনস্রোতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়।
ব্রিটিশ সরকারের প্রতি সাঁওতালদের আনুগত্য বৃদ্ধির জন্য সাঁওতালদের এলাকায় খ্রিস্টান মিশনারীদের অবাধ প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়। এই অঞ্চলে মিশনারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং সাঁওতালদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করে।
সাঁওতাল বিদ্রোহের তীরধনুক,বর্শা, কুড়ুল ও তরবারি সম্বল করে সশস্ত্র ইংরেজ বাহিনীর সামনে যে বীরত্ব দেখিয়েছিল, তা পরবর্তীকালে বিভিন্ন আন্দোলনকে উৎসাহিত করে।
সাঁওতাল বিদ্রোহ কেবল মাত্র সাঁওতালদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এই বিদ্রোহে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ অংশগ্রহণ করে এবং তাদের মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠে।