হিন্দুমেলা কি | Hindu Mela

হিন্দুমেলা   কি


উনিশ শতকে বাংলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন গড়ে ওঠে। এই সংগঠন গুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল হিন্দু মেলা এই সংগঠনের সকল সদস্যগণ হিন্দু ছিলেন বলে একে হিন্দু মেলা বলা হয়। 1867-1880 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মোট 14 বার এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
 
A. হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠা: পন্ডিত রাজনারায়ণ বসুর ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয় এবং তাঁর সহযোগিতায় নবগোপাল মিত্র 1867 খ্রিস্টাব্দে চৈত্র সংক্রান্তির দিন কলকাতায় হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠা করেন। ঠাকুরবাড়ির সত্যেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেলা আয়োজনে সাহায্য সহযোগিতা করেন। জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন হিন্দুমেলার প্রথম সম্পাদক এবং সহ সম্পাদক ছিলেন নবগোপাল মিত্র।
 
B. চৈত্রমেলা নামকরণ: 1867 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1880 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিতে এই বাৎসরিক মেলা অনুষ্ঠিত হতো বলে সংগঠনটি চৈত্রমেলা নামে পরিচিত ছিল। পরে মেলার আয়োজকগণ চৈত্রমেলার নাম পরিবর্তন করে হিন্দুমেলা নামকরণ করে।
 
C. হিন্দুমেলার উদ্দেশ্য: বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে হিন্দুমেলা শুরু হয়। এই উদ্দেশ্যগুলি হল
 
1. হিন্দুধর্মের ঐতিহ্য: হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠা অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু ধর্মের অতীত ঐতিহ্য গৌরকথা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে প্রচারের মাধ্যমে হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করা।
 
2. সাহিত্যচর্চা হস্তশিল্পে উৎসাহদান: হিন্দুমেলার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় জনসাধারণের মধ্যে সাহিত্যচর্চার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান এবং হস্তশিল্পে উৎসাহদান।
 
3. পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অগ্রগতি রোধ: উনিশ শতকে ভারতে পাশ্চাত্য সভ্যতা সংস্কৃতি দ্রুতগতিতে প্রসারিত হতে থাকে। ভারতে পাশ্চাত্য সভ্যতা সংস্কৃতির অগ্রগতি রোধদের উদ্দেশ্যে হিন্দুমেলা বিভিন্ন উদ্যোগ নেন।
 
4. দেশাত্মবোধের প্রসার: ভারতীয়দের জাতীয়তাবাদী ধ্যান-ধারণা জাগরণ হিন্দুমেলার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল। ভারতীয়দের মধ্যে দেশাত্মবোধের চেতনা জাগিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে তারা দেশীয় ভাষা চর্চা করা, দেশের জয়গান গাওয়া, দেশাত্মবোধক কবিতা পাঠ দেশীয় শিল্পের প্রসার প্রভৃতির উদ্যোগ নেয়।
 
5. শরীরচর্চায় উৎসাহ আত্মনির্ভর ভারত: ভারতীয়দের শরীরচর্চার উৎসাহ দেওয়া হিন্দুমেলার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। দেশীয় বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলা হিন্দুমেলার উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য ছিল।
 
D. বিশিষ্ট সদস্যগণ:
হিন্দুমেলার বিশেষ উল্লেখযোগ্য সদস্যগণ হলেন রাজা কমলকৃষ্ণ বাহাদুর, রাজনারায়ণ বসু, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, গিরিশচন্দ্র ঘোষ কৃষ্ণদাস পাল প্রমূখ।
 
E. হিন্দুমেলার কার্যাবলী:
ভারতীয়দের জাতীয়তাবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে হিন্দুমেলার বিভিন্ন কর্মসূচি ছিল। হিন্দুমেলার প্রধান কার্যাবলীগুলি হল ধর্ম ইতিহাস বিষয়ক বক্তৃতা, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, দেশাত্মবোধক সংগীত, লাঠি- তরোয়াল খেলা, ছাত্রদের ্যায়াম প্রদর্শনী, ফল ফল প্রদর্শনী, মাটির জিনিসের প্রদর্শনী উল্লেখযোগ্য ছিল।
 
নবগোপাল মিত্র মহাশয় এই মেলার কর্মকর্তা রূপে নিয়োজিত ছিলেন। হিন্দু মেলার প্রথম বার্ষিক সভায় দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'মলিন মুখচন্দ্র মা ভারত তোমারি' গানটি গাওয়া হয়। পরবর্তী বার্ষিক সভা গুলিতে জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'গাও ভারতের জয়' গানটি গাওয়া হতো। 1875 খ্রিস্টাব্দে হিন্দুমেলায় 14 বছর বয়স্ক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের লেখা 'হিন্দুমেলার উপহার' কবিতাটি আবৃত্তি করেন।
 
F. হিন্দুমেলার অবদান:
1. জাতীয়তাবাদ স্বদেশী চেতনায় জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছিল হিন্দুমেলার প্রধান উদ্দেশ্য।
 
2. মেলার আয়োজকরা ন্যাশনাল পেপারের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের কথা প্রচার করেন।
 
3. বাংলা ভাষায় শ্রেষ্ঠ রচনা জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা সাহিত্য ক্ষেত্রে উৎসাহ সৃষ্টি করে
 
4. মেলায় হাতে তৈরি জিনিসপত্রের প্রদর্শনী হত, ফলে শিল্পী কারিগরেরা উৎসাহ পায়।
 
5. হিন্দু মেলায় জনসমাবেশ বক্তৃতা বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধ অনুভূতি সৃষ্টি করে।
Theme images by chuwy. Powered by Blogger.